সাম্প্রতিক সময়ে পাইলস রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েই চলেছে। এর অন্যতম কারণ লাইফ স্টাইল পরিবর্তন এবং খাওয়া দাওয়া। বিশেষ করে আঁশজাতীয় খাবার আমরা অনেকেই খাই না। এখন এমনও রোগী পাওয়া যায় যাদের নতুন-পুরনো পাইলস, চিকিৎসার পর আবার গ্যানগ্রিন হয়ে গেছে এরকমও। সব রোগীরই চিকিৎসা করলে ভালো হয়। কিন্তু সবারই একটি কমন প্রশ্ন— পাইলস অপারেশন একবার করলে কি বারবার করতে হয়? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে না, একটি সুস্পষ্ট না।
Recurrence বা আবার পাইলস হওয়ার হার হাজারে একটি বা দুটি। এটাকে অতি স্বাভাবিক ধরা যেতে পারে। তাহলে এ প্রশ্ন জনমনে এত ব্যাপক, এর কি কোনো ভিত্তি আছে, হ্যাঁ আছে। এ প্রশ্নের কারণ— বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা বিভিন্ন অপচিকিৎসার (কেউ কেউ) শিকার হন। এতে বিভ্রান্তি বাড়ে। অথচ পাইলসের সুচিকিৎসা আমাদের দেশে বিদ্যমান। এছাড়া এক পর্যায়ের চিকিৎসার এক রকম ফল হয়। আর পায়ুপথ স্থানটি অতি সংবেদনশীল হওয়ায় যথাযথ অপারেশন না হলে এবং অপারেশন-পরবর্তী নিয়মকানুন যথাযথভাবে মেনে না চললে জটিলতা হতে পারে।
এই জটিলতা দুই ধরনের। একটি হচ্ছে পাইলস আবার হওয়া আর অপরটি হচ্ছে পায়ুপথ সরু হয়ে যাওয়া। যথাযথভাবে অপারেশন না হলে এই দুটির যে কোনো একটি হতে পারে কিন্তু যথাযথভাবে অপারেশন হলে এর হার খুবই কম। আবার হওয়ার ব্যাপারে প্রচলিত ধারণার আরও কারণ আছে। পায়ুপথে অনেক রোগ হয়, যেমন পাইলস, ফিসার, ফিষ্টুলা ইত্যাদি। এর মধ্যে কয়েকটি রোগ বারবার হওয়ার প্রবণতা থাকে, যেমন ফিষ্টুলা।
এর একবার অপারেশন করলে আবার হওয়ার হার বিশ্বব্যাপীই বেশি, কিন্তু পাইলস নয়। সাধারণ মানুষ সব কিছুকেই পাইলস মনে করার ফলে এই ধারণার উৎপত্তি হয়। আরও একটি কারণ হচ্ছে পাইলস অপারেশন করার পর এ রোগীর পরবর্তীতে পায়ুপথে অন্য রোগও হতে পারে। সেটাও পাইলস বলে অনেকে ভুল করতে পারেন। সোজা এবং সহজ কথায় পাইলস অপারেশন একবার করলে বারবার করতে হয়, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। সঠিকভাবে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় পাইলস অপারেশন হলে এবং অপারেশনের পরবর্তী নিয়মকানুন মেনে চললে আবার পাইলস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, পাইলস নিয়ে ভয় পেলে চলবে না। যথাসময়ে চিকিৎসা করলে আরোগ্য লাভ হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিকার নয় প্রতিরোধ এসব ক্ষেত্রে উত্তম। তাই প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিতে হবে। অন্যথায় একটা পর্যায়ে জটিলতার আশঙ্কা থাকে।
লেখক : কোলোরেক্টাল সার্জন, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।